এফএনএস: ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদ-সহ যথেষ্ট পরিমাণ জরিমানার বিধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জেআর খাঁন রবিন জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। রিটে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০’ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া ডাক্তারের সাজা তিন বছর ও জরিমানা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- অথবা মৃত্যুদ-সহ জরিমানা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কেন ভুয়া ডাক্তারদের দ-সহ জরিমানা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হবে না, সে মর্মেও রিটে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও রেজিস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর একই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে বিবাদীদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে এই রিট দায়ের করা হলো। রিটকারী আইনজীবী মো. জেআর খাঁন রবিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) ও ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা ও জনস্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ থাকলেও অনুচ্ছেদ ৩১ ও ৩২ অনুযায়ী মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সেবা একটি মৌলিক অধিকার। মানুষের এই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডাক্তারদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভুয়া ডাক্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ এইসব ভুয়া ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত নানারকম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। এমনকি শারীরিকভাবে স্থায়ী অক্ষমতাসহ অনেকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ধারা ২৮(৩) অনুযায়ী যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে নিবন্ধনকৃত একজন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে প্রতারণা করেন অথবা প্রতারণামূলক ভাবে তার নাম বা পদবীর সঙ্গে নিবন্ধনকৃত মর্মে কোনও শব্দ, বর্ণ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন, তার মিথ্যা পরিচয় দ্বারা কোনও ব্যক্তি প্রতারিত না হলেও তার তিন বছর কারাদ- অথবা এক লাখ টাকা অর্থদ-ের অথবা উভয় দ-ে দ-িত হওয়ার বিধান রয়েছে।’ তিনি জানান, ‘অন্যদিকে ওই আইনের ধারা ২৯ অনুযায়ী কেউ অনুমোদিত মেডিক্যাল কলেজ অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি অর্জন না করে তার নামের আগে ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করলেও অনুরূপ সাজার বিধান রয়েছে।’ জেআর খাঁন রবিন বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) ধারা অনুযায়ী খাদ্য ও ওষুধ তৈরি বা বিক্রির জন্য মৃত্যুদ- অথবা যাবজ্জীন কারাদ- অথবা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ-সহ জরিমানার বিধান রয়েছে। মানুষের সার্বিক ক্ষতির দিক বিবেচনা করে ওই সাজা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু একজন ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সাজা অত্যন্ত নগণ্য। এ কারণে দেশে ভুয়া ডাক্তারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবাও দিনে দিনে হুমকির মুখে পড়ছে।