রাজশাহী কলেজে মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।
কিছু এনজিও ও বিদেশি সংস্থার চাপে এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তাদের জন্য যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা খুবই উন্নতমানের। শিগগিরই রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজশাহী কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে তিনি রাজশাহী কলেজ শিক্ষকদের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা এখন যেখানে আছেন, সেখানে তিনবেলা খাচ্ছেন আর নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। ভাসানচর চমৎকার জায়গা। এখন পর্যন্ত ৩০৬ জনকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে বসবাস করা রোহিঙ্গা নারীরা কাজ শুরু করেছেন। অনেক রোহিঙ্গা সেখানে যেতে ইচ্ছুক তবে বেশকিছু এনজিও ও বিদেশি শক্তি তাদের ভাসানচরে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট সহযোগিতা পাবো।
সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন প্রশ্নে মোমেন বলেন, পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের কাছে ট্যারিফ কমানোর দাবি থাকবে। দেশটিতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস) সুবিধা আমাদের জন্য বড় বিষয় নয়। আমরা যে পরিমাণ রফতানি করি, সেটা বহাল রাখটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এসময় মন্ত্রী তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ভারতের আভ্যন্তরীণ জটিলতা থাকায় তিস্তা চুক্তি এখনও স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি। তবে যেকোনো সময় তা হতে পারে। এ জন্য আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন বলেও মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
এর আগে মন্ত্রী জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি জাদুঘরের গ্যালারিসমূহ ঘুরে দেখেন ও সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইতে লেখা মন্তব্যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঐতি-হাসিক এসব সংগ্রহ পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষণের জন্য ধন্যবাদ জানান। পরে মন্ত্রী জাদুঘর গ্রন্থাগার পরিদর্শন করে এর সংগ্রহ সম্পর্কে ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি গ্রন্থাগারের জন্য তাঁর লেখা ও সম্পাদিত কয়েকটি বই উপহার দেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, রেজিস্ট্রার প্রফেসর এম এ বারী, প্রক্টর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান, জাদুঘরের পরিচালক এ আর এম আব্দুল মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। পর ক্যাম্পাসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং কলেজ অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে একটি গাছের চারা রোপন করেন। সবশেষে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন বলেন, জ্ঞানকে সম্মান করতে হবে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদেরকে অনুসন্ধিৎসু করা যাতে তারা জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হয়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিবেশীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু আমাদের চিহ্নিত কোন শত্রু নেই। বর্তমান সরকার আলোচনার মাধ্যমে সকল দ্বি-পাক্ষিক বিষয় সমাধানে বিশ্বাসী। প্রতিবেশী দেশের সাথে স্থল, সমুদ্রসীমা ও গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মহা: হবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে