রাবি প্রতিনিধি: শরতের বিদায়, হেমন্তের আবির্ভাব। খুব সকালে দরজা ঠেলে বের হলেই কুয়াশার আবরণ, এরপর সবুজ দুর্বাঘাসে পা ফেলতেই শিশিরের বিন্দুকণার পরশ। ঠিক তখনই অনুভূতির ভাষায় শব্দ জমাট হয় ‘এ যেন শীতের আগমণ’। শীতের শুরুতেই পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। করোনাকালীন বন্ধ ক্যাম্পাসে প্রতিবারের মতো শীত আসতে না আসতেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে। পরিযায়ী পাখির আগমনে নির্জন ক্যাম্পাসে প্রাণ ফিরে এসেছে। পাখির কলকাকলীতে মুখর পুরো প্রাঙ্গণ।
ক্যাম্পাস যেন এখন পাখির রাজ্য। কিছু পাখি ডুবসাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, এ ডাল থেকে ও ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পানিতে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেন পাখিদের মেলা বসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপচা, শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরসহ বেশ কয়েকটি জলাশয়ে বসেছে পরিযায়ী পাখির মেলা। প্রতিবছর শীতজুড়ে অবাধ বিচরণ থাকে তাদের। এবারও পরিযায়ী পাখির কলকাকলি, খুনসুটি আর জলকেলিতে ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে স্বর্গ।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে হিমালয়ের উত্তরে প্রচ- শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে। দেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
দুই ধরনের পাখির আগমন হয় রাবি ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি থাকে ডাঙায় বা ডালে। আরেক ধরনের পাখি থাকে পানিতে। তবে রাবির জলাশয়গুলোতে আসা বেশির ভাগ পাখিই হাঁস জাতীয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখিই ছোট সরালি। আর বাকিদের মধ্যে রয়েছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিযায়ী পাখিদের আগমন মুগ্ধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন তাদের দেখতে। ক্যাম্পাসে এবার খুব বেশি পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অন্যান্য সময় খুব কম পরিমাণে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। তবে এবারে প্রচুর পরিমাণে পরিযায়ী পাখির আগমন আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে আসছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও এসেছে। ইতোমধ্যে তিন থেকে চারশত সরালি পাখি পাড়ি জমিয়েছে ক্যাম্পাসে এবং দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যা-পক আনন্দ কুমার সাহা আরো বলেন, চলতি মাসের ৫ নভেম্বর থেকে পাখিরা আসতে শুরু করেছে। পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরীদের সতর্ক থাকতে বলেছি।