বাসস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে আরো বৃহৎ পরিসরে দায়িত্ব পালনে সক্ষম একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্ট গার্ডকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দু’টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল, পাঁচটি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, দু’টি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বেইস, ভোলা’র কমিশনিং প্রদান কালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে মূল অনুষ্ঠানস্থল চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড বার্থ পতেঙ্গা’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্ট গার্ডকে একটি যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’
‘জাটকা নিধন রোধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে কোস্টগার্ডের বহরে এই নৌযানগুলো যুক্ত হওয়া সংস্থাটির জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। কারণ, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল টহলে রাখাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তাঁর সরকারের সময়ে কোস্ট গার্ডের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত প্রায় ১২ বছরে কোস্ট গার্ডে’র জন্য বিভিন্ন আকারের ৫৫টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ডের বেইসসমূহের কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রার’ মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর সদস্যরা স্বল্পতম সময়ে সুবিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে।’
তিনি কোষ্টগার্ড সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোস্ট গার্ডের বিভিন্ন জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কোস্ট গার্ড সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ, মানসিক বিকাশ ও উন্নত মনোবল অর্জনে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।’
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন, কোস্টগার্ডের সুনাম যেন সব সময় বজায় থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তা সরকার দিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আশরাফুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে অধিনায়কগণের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ হস্তান্তর করেন। নব্য কমিশনিংকৃত ৯টি জাহাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র ও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ২০১৪ সালে ইতালি সফরের সময় বাংলাদেশ কোস্ট গাডের্র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ইতালি সরকারের যে সহযোগিতার কামনা করেন তারই অংশ হিসেবে পরবর্তীকালে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে ইতালি নৌবাহিনীর চারটি করভেট প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-কে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার দুটি বিসিজিএস তাজউদ্দীন ও বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল জাহাজ দু’টি ২০১৭ সালে তিনি কমিশনিং করেন। ইতালি হতে সংগৃহীত আরও দু’টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল-বিসিজিএস মনসুর আলী এবং বিসিজিএস কামারুজ্জামান আজ কমিশনিং হলো।
পাঁচটি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল-বিসিজিএস সবুজ বাংলা, শ্যামল বাংলা, সোনার বাংলা, স্বাধীন বাংলা ও অপরাজেয় বাংলা এবং দু’টি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট-বিসিজিএস সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া এ বাহিনীর বহরে যুক্ত হলো।